অবিশ্বাস্য প্রাণশক্তির জন্য পরিচিত আনহেল দি মারিয়া, যার শৈশব থেকেই দৌড়ানোর প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়েছে সবাই। তাঁর পরিবারও সেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিল, তিনি এই অবিশ্বাস্য শক্তি কোত্থেকে পান? তিন বছর বয়সেই দৌড়ানোর প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ দেখা যায়। বাসায় হাঁটার সময় সবকিছু যেন তছনছ হয়ে যেত। শেষমেশ তাঁর পরিবার বাধ্য হয়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে, চিকিৎসক পরামর্শ দেন ফুটবল খেলতে। ভাগ্যিস, সেই পরামর্শ তাঁকে ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত করেছিল, নইলে বিশ্ব কি পেত আনহেল দি মারিয়াকে?
দি মারিয়ার ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা এবং নিষ্ঠা তাঁকে ফুটবল ইতিহাসে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের সঙ্গে প্রতিটি মূহূর্ত তাঁকে আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। যখনই তিনি গোল করেন বা শিরোপা জেতেন, তখন তাঁর চোখে জল দেখা যায়, যা তাঁর দলের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতীক।
বুয়েনস এইরেসের মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে, আর্জেন্টিনা ও চিলির ম্যাচ শুরুর আগে যখন স্টেডিয়ামের জায়ান্টস্ক্রিনে তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তগুলো দেখানো হচ্ছিল, গ্যালারিতেও অনেক দর্শককে চোখ মুছতে দেখা যায়। তাঁর পরিবারকেও সেই মুহূর্তে পাশে দেখা যায়। দি মারিয়া তাঁর স্ত্রী ও দুই কন্যাকে ধরে রেখেছিলেন, কিন্তু চোখের জলে তা আটকাতে পারেননি।
৩৬ বছর বয়সেও দি মারিয়ার সেই শৈশবের প্রাণশক্তি ফুটবল মাঠে দেখা যায়। তাঁর দৌড় ও পারফরম্যান্স দেখে ফুটবলপ্রেমীরা আনন্দে ভাসেন। তবে গত কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনার হয়ে তিনি তাঁর শেষ দৌড় সম্পন্ন করেন। বয়সের কারণে অবশেষে তাঁর থামতে হয়। যদিও তাঁর দুঃসাহসিক মনোভাব কখনো থামে না, তিনি জাতীয় দলের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও নিষ্ঠা সবসময় প্রকাশ করেছেন।
আজ, আকাশি-সাদার প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা প্রকাশ পেল যখন তিনি পরিবারকে নিয়ে স্টেডিয়ামের মাঠে হেঁটেছেন। গ্যালারি করতালিতে মুখরিত ছিল, যেন পুরো বিশ্ব তাঁকে সম্মান জানাচ্ছে। বিশ্বকাপ ফাইনাল, কোপা ফাইনাল, অলিম্পিক ফাইনাল এবং ফিনালিসিমার গোলগুলো আবারও সবাই ভিডিওতে দেখল। তাঁর কান্নায় ভেজা সেই মুহূর্তগুলো স্মরণ করল।
তাঁর দুই কন্যা সেই মুহূর্তে কেমন অনুভব করেছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। বাবার প্রতি পুরো স্টেডিয়ামের সম্মান ও ভালোবাসা দেখে সন্তানেরা নিশ্চয়ই গর্বিত ছিল। তবে, সেই খেলাটি যার জীবন, সেই খেলায় তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছেড়ে দেওয়ার মুহূর্ত পৃথিবীর কোনো সন্তানের জন্য সহজ নয়।