খুলনায় নবী (সা.)–কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে পুলিশ কার্যালয়ে প্রবেশ করে কিশোরকে গণধোলাই

খুলনার আযম খান সরকারি কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণির এক কিশোরকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার রাতে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা উপপুলিশ কমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ে ঢুকে কিশোরটিকে মারধর করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত কিশোরের বাড়ি খুলনার সদর থানা এলাকায়। ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তেজিত জনতা তার উপর চড়াও হয়। মঙ্গলবার কিশোরটি ফেসবুকে কটূক্তি করে বলে অভিযোগ ওঠে, যা বুধবার জনসাধারণের নজরে আসে। ওই দিন দুপুরে কিশোরটি টুটপাড়া এলাকার একটি কোচিং সেন্টারে গেলে তার বন্ধুরা তাকে আটকায় এবং ফেসবুকে এমন মন্তব্যের কারণ জানতে চায়। খবর পেয়ে কিশোরের বাবা সেখানে উপস্থিত হন এবং পরে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। সেখান থেকে পুলিশের পরামর্শ নিতে বলা হয়।

বিকেল গড়ানোর সাথে সাথে কিশোরের বাবা ও কয়েকজন ছাত্র উপপুলিশ কমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ে যান। ঘটনাটি জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা কার্যালয় ঘিরে ফেলে এবং বিক্ষোভ শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হন এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে, উত্তেজিত জনতা শান্ত হয়নি। রাত ১১টার দিকে তারা গেট ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশ করে এবং কিশোরটিকে গণপিটুনি দেয়।

পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে কিশোরটিকে নিরাপদে বের করে আনে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে কিশোরটিকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। উত্তেজিত জনতা সেসময় সেনাবাহিনীর গাড়ি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে।

অন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির কারণে স্থানীয়রা কিশোরটিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য করে। কার্যালয়ের সামনে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার লোকজন সমবেত হয়ে তাকে প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হলেও কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশের কার্যালয়ে ঢুকে কিশোরটিকে আক্রমণ করে। সশস্ত্র বাহিনীর আপ্রাণ প্রচেষ্টায় কিশোরকে জীবিত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। বর্তমানে সে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং আশঙ্কামুক্ত।

আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে কিশোরের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলমান। সুস্থ হওয়ার পর তাকে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুযায়ী হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া, কিশোরের মৃত্যু নিয়ে ছড়িয়ে পড়া গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য জনগণকে অনুরোধ করা হয়েছে।

খুলনার উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে আদালতের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তবে উত্তেজিত জনতা সেই আশ্বাসে শান্ত হয়নি এবং কিশোরকে মারধর করে। প্রথমে গুজব ছড়ায় যে কিশোরটি মারা গেছে, তবে বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ জানায়, সে জীবিত রয়েছে এবং সেনাসদস্যদের তত্ত্বাবধানে আছে।

উল্লেখ্য, খুলনার সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার উপপুলিশ কমিশনারের কার্যালয়েই এই ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় পুলিশ জানায়, কিশোরের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে এবং কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় আরও একটি মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

আপনার শরীরের ৫টি অদ্ভুত সংকেত যা বিপদের পূর্বাভাস দেয়!

মানবদেহ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সংকেত দিয়ে আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ অবস্থার...

সাকিব আল হাসান দেশে ফিরলে কী হতে পারে?

আগামী মাসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে...

মেসিই কি সর্বকালের সেরা ফুটবলার?

লিওনেল মেসির খেলা দেখতে যেন সবকিছুই সহজ মনে হয়।...

সাকিবকে একাদশ থেকে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠে এলো

সাকিব আল হাসানের মাঠ ও মাঠের বাইরের পারফরম্যান্স নিয়ে...